পোষ্ট নং 49
মুসলমান অর্থ কি?
প্রকৃত মুসলমান কারা?
মাথায় টুপি মুখে দারি থাকলেই তাকে মুসলমান বলা যাবে না। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে কালো কহর ফেললেও তারে মুসলমান বলা যাবে না। কোরআন পড়তে পড়তে মুখস্ত করলেও তাকে মুসলমান বলা যাবে না। এগুলো আমার কথা নয়, পাক পাঞ্জাতনের একজন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রাণ প্রিয় নাতি কলিজার টুকরা হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বলেছিলেন।
কারবালায়.....
ইমাম হুসাইন (আঃ)এর লোক সংখ্যা ছিল 72 জন। আর ইয়াজিদের লোক সংখ্যা ছিল 30 হাজার। এরা সবাই কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত পালন করতো, ইমামতি করতো, খুৎবাহ দিত। ঐ ত্রিশ হাজার ইয়াজিদের সৈন্যদের মধ্যে আড়াইশত কোরানে হাফেজও ছিল। অথচ ইমাম হুসাইন (আঃ) তাদেরকে (ঐ আড়াইশ কোরানে হাফেজ সহ) সবাইকে মুসলমান বলেই স্বীকার করলেন না। তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন ""আলাইছা ফি মুসলিমুন "" তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নেই?? অথচ আড়াইশ কোরানে হাফেজ ছিল। সুতরাং কোরআন হাফেজ টুপি দারি নামাজ রোজা এসব করলেই মুসলমান নয়। কারণ নামাজ তো ইয়াজিদ মীর জাফরও পরেছে। তাদের মাথায় টুপি ছিল, কপালে নামাজের দাগও ছিল, তবুও তারা মুসলমান নয়। কারণ মুসলমানের প্রকৃত অর্থ হলো : আত্ম সমর্পণকারী। আর আত্মসমর্পন তখনই হয় যখন কোন নবী, রাসূল পীর পয়গম্বর এবং কামেল মুর্শিদের কাছে নিজের জান, মাল, ইজ্জত অর্পণ করে তার পায়রবী করে। হযরত মাওলা আলী, ওসমান, ওমর, আবু বকর তারা ততখন পর্যন্ত মুসলমান হননি, যতোক্ষণ পর্যন্ত না নবীজীর নিকট জান, মাল, ইজ্জত,বিলিয়ে দিয়ে বাইয়াত বা আত্মসমর্পন বা মুরিদ না হয়েছেন । খাজা বাবা ওসমান হারুনীর নিকট আত্ম সমর্পণ করেছেন, বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানি আবু সাঈদ মাখজুমীর নিকট আত্মসমর্পন বা মুরিদ হয়েছেন, নিজামউদ্দিন আউলিয়া শেখ ফরিদউদ্দিন এর নিকট , লালন সাঁইজি সিরাজ সাঁইজির নিকট এভাবেই আত্মসমর্পন হয়ে মুর্শিদের খেদমত করে প্রকৃত মুসলমান এবং অলী আউলিয়া হয়েছেন। আত্মসমর্পন বা মুরিদ না হলে তাকে মুসলমান বলা যাবে না, সে কোরানের হাফেজ মৌলবী যাই হক। তার প্রমাণ প্রথমেই দিয়েছি কারবালার ইতিহাস টেনে। তাই কামেল মুর্শিদের চরনে আত্মসমর্পন কারীই প্রকৃত মুসলমান ও মুক্তির একমাত্র পথ।। জয় সাঁইজি, জয় হোক বিশ্ব মানবতার, সকল জীবের শান্তি কামনায় আমি।
........................সাজু
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭
মুসলমান কারা?
সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭
লতিফায় কালব(বিশ্ব ওলী খাজা বাবা ফরিদপুরী কুঃ ছেঃ আঃ
লতিফায় কালবের পরিচয়ঃ
কালব হইল আলমে আমর অর্থাৎ নুরের জগিতের লতিফা। আলমে আলমে আমর আল্লাহতায়ার আরশের উপর অবস্থিত। আলমে আমর বা নুরের জগতে ইহার মুল বিধায়,ইহা একটি সূক্ষ জগতের লতিফা।মুর্শিদে কামেলের তাওয়াজ্জুতে এই লতিফায়ে কালব জিন্দা হইয়া মুরীদের “জেকেরে কালবী”হাসিল হয়,আল্লাহতায়ালার নুরের প্রকাশ পায়। মুর্শিদের দয়ায় “জেকেরে কালবী” হাসিল হইলে মুরিদের দেল অতি সহজে আল্লাহতায়ালার দিকেরুজু হয়।নতুন ছালেক আল্লাহতায়ালার অনুসন্ধানের পথে সাধনায় উৎসাহি ও অনুপ্রাণিত হয়।
এই লতিফার স্থান বাম স্তনের দুই আঙ্গুল পরিমান নিচে,ঈষৎ পাঁজবার দিকে নিরুপিত আছে। পদ্ম-কোরক উল্টাইয়া ধরিলে যে রুপ দেখা যায়,লতিফায়ে কালবের আকার প্রায় সেই রুপ। ইহার একটি আসল যে রুপ আরশের উপর আছে,তদরুপ আসলের আসল তাজাল্লীয়াতে আফয়ালে সন্নিবেশিত রহিয়াছে। তাজাল্লিয়াতে আফয়াল হইল আল্লাহতায়ালার সেই শক্তি যাহার মধ্যে সৃষ্টি জগতের সকল কর্ম- কান্ড নিরূপিত রহিয়াছে।এই “তাজাল্লীয়াতে আফয়ালের নুর বা জ্যোতির শক্তির দ্বারা এই পৃথিবী, চন্দ্র,সূর্য,গ্রহ,নক্ষত্র নিজ নিজ কেন্দ্রের উপর ও কক্ষপথে পরিভ্রমণ করিতেছে,দিন ও রাত্রি হইতেছে, কক্ষপথের পরিক্রমার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হইতেছে,একেক ঋতু পরিবর্তনের ফলে ন্তুন নতুন ফুল-ফল,তরু-লতা,ফসলাদি সৃষ্টি হতেছে। প্রানী জগতেও নতুন জম্ম হইতেছে।
খোদাতত্ব সাধনার পথের-পথিক যখন এই মাকামে আসিবে,সৃষ্টি জগতের ক্রিয়াকর্ম যাহাই তাহার দৃষ্টি গোচর হইবে,তাহাই সে আল্লাহরতায়ালার ক্রিয়াগুন সমুহের প্রতিবিম্ব বলিয়া জানিবে। খোদাতায়ালা ভিন্ন ব্যক্তি,বস্তু,নক্ষত্র,সূর্য,আকাশ,প্রভৃতির কর্ম বস্তুতই যে আল্লাহতায়ালার ক্রিয়াগুন ব্যতীত সম্ভব নই,তাহা ছালেক সুস্পষ্টভাবে অনুভব করিবে। এই লতিফার নুর বা জ্যেতি সরিশা ফুলের মত হলুদ বর্ণের।
খোদাতায়ালা আমাদের যে সকল দশটি উপাদান দ্বারা তৈরি করিয়াছেন তাহাদের প্রতিটিকে লতিফা বলে।পূর্ববর্তী নসিহতে বলা হইয়াছে। লতিফা সমুহ দুই ভাগে বিভক্ত “আলমে আমর” ও আলমে “খালক”।আলমে আমর নুরের জগত বা সুক্ষ জগত, এবং আলমে খলক জড় জগত,বা স্থল জগত।
কালব,রুহ,সের,খফি ও আখফা,এই পাঁচটি আলমে আমর, বা সুক্ষ জগতের লতিফা। আব,আতস,খাক,বাদ, ও আগুন, পানি ,মাটি, বাতাস ও নাফস এই পাঁচটি স্থল জগতের লতিফা।অসিম ক্ষমতাবান আল্লাহতায়ালা “কুন” বা হউ শব্দের আমর দ্বারা আলমে আমরের সকল লতিফা সম্বলিত “রুহ” সৃষ্টি করিয়াছিলেন। সেই আমর হইতে সৃষ্টি হেতু “কালব, রুহ,সের,খফি, ও আখফাকে আলমে আমরের বা নূরের জগতের লতিফা বলা হয়। এই সকল লতিফা এমন হেকমতে তৈরি যে,এহারা আকার সংলগ্ন অবস্থায় আকারের রুপ ধারন করে আবার নিরাকার অবস্থায় ও থাকিতে পারে।আলমে আমরের বা সুক্ষ জগতের লতিফা “রুহ’ দ্বারা স্থল জগতের লতিফা নাফস কে পবিত্র করায়া আল্লাহতায়ালার পথে লইয়া যাওয়ায় মানব জীবনে খোদাপ্রাপ্তির সাধনার প্রথম পদক্ষেপ।রুহ-নাফস কে পবিত্র করিতে আসিয়া নিজেই অপবিত্র হইয়া যায়। তাই রুহের পবিত্রতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য সতর্ককারির প্রয়োজন।অন্যান্য তরিকায় মানব দেহের অপবিত্রতা বা দোষের মূল কারন নাফস কে পবিত্র করিয়া রুহকে পবিত্র করাইবার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু নাফস কে পবিত্র করা যেমন দুঃসাধ্য তেমনি সময় সাপেক্ষ।
খোদাতত্ত্ব সাধনায় লতিফায় কালবের গুরুত্বঃ
মুজাদ্দেদ আলফেসানী(রঃ) সাহেব আলমে আমরের অপর লতিফা কালবের দ্বারা প্রথমে রহুকে নাফসের প্রভাব মুক্ত করিবার রীতি প্রবর্তন করেন।এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে আলমে আমরের কালব রুহ,সের,খফি,আখফা-এই পাঁচটি লতিফা,দ্বিতীয় পর্যায়ে আলমে খালকের লতিফা সমূহ অর্থাৎ আব,আতস,খাক,বাদ-কে পবিত্র করার পদ্ধতি গ্রহন করা হয়। সর্বশেষে লতফায়ে নফসকে পবিত্র করা হয়।
মহা কালবের ক্ষুদ্রতম অংশ লতিফায়ে কালব।আল্লাহপাক ফরমান,আস্মান,জমীনের কোথাও আমার গুঞ্জায়েশ হয় না,এক মাত্র মুমিনের কালব ব্যতীত।
মুমিন ব্যক্তির কালবের মধ্যেই আরশ,কুরসি,লওহ,কলম ও সৃষ্টি জগতের সকল কিছুরই অবস্থান। মুমিন ব্যক্তির কালব যে কত প্রশস্ত, তাহা আল্লাহপাকই জানেন।লতিফায়ে কালব যখন জাত আহদিয়াতের নুর পরিপূর্ণ হয় তখন মহা কালবের সন্ধান পাওয়া যায় । তখনি আল্লাহপাক কোরআন মাজিদে ফরমানঃ
“অফি আন ফুসিকুম আফালা তুবছিরুন”
অর্থাৎঃ আমার নিদর্শন তোমাদের ভিতরেই আছে,তোমরা দেখনা কেন? (সুরা ; জারিয়াতঃ২১ নং আয়াত)তখন ছালেক মহা কালবের ভিতর দিয়া আরশ,কুরসি,লওহ,কলম সকল কিছুওরই সন্ধান পায়।
তাই মহাকালবের ভিতরে অর্থাৎ যে কালবের ভিতরে আল্লাহপাকের যোগসুত্র বা সান্নিধ্য পাওয়া যায় সে মহা কালবের পরিধি সাততালা আকাশ হইতে, সাততলা জমিনের নীচে “তাহাতাস সারা” পর্যন্ত। এই মহা কালবে ছায়ের শেষ করিতে পারিলে আল্লাহপাকের সান্নিধ্য পাওয়া যায়। তাই রাসুলেকরিম (সাঃ) ফরমানঃ লাসালাতা ইল্লা বিহুজুরি কালব
অর্থাৎ জুহুরি কালব ছাড়া নামাজি হয় না।
তাই খেয়াল কালবে কালব আল্লাহপাকের দিকে, আল্লাহ হাযের নাজির, তাই খেয়ালকে এক কালিন কালবে ডুবাইয়া,আল্লাহকে হাজির নাজির ওয়াহেদ জানিয়া হুজুরি কালবে সিজদাহ করাই আসসালাতু মিরাজুল মোমিনিন।তাই লতিফায় কালবে খেয়াল এককালিন ডুবাইতে না পারিলে নামাজে হুজুরি হাসিল হইবে না। আর তাহা না হইলে নামাজে বিভিন্ন খারাপ কথা মনে আসিবে। বাল্য জীবনে কত বন্ধুর স্মৃতি, কত মমলা মকাদ্দমার কথা মনে আসিয়া পৌছিবে।মন সেই দিকে ঘুরিয়া যায়বে, মুখে “সুবাহান রাব্বিয়াল আলা” (অর্থাৎ আমার প্রতিপালকে পবিত্রতা ঘোষণা করছি) বলার কি দাম? মৌখিক ভালবাসার দাম কেউ দিয়া থাকেননা। তাহাকে লিফ সিমপ্যাথি(Lip sympathy)বলা হয়। সে জন্য আল্লাহপাক বলেনঃ “তোমরা নাফসের সহিত জেহাদ কর”। “নাফসে আম্মারার”সকল কিছুই আল্লাহতায়ালার বিরুদ্বে।
“হুজুরী কালব” বা কালবের একাগ্রতা অর্জনে মুর্শিদে কামেলের ভুমিকাঃ
হুজুরি কালবে মারেফত হাসেল না করা পর্যন্ত কেহই মুমিন হইতে আরিবে না। হুজুরি কালব হাসিল করিবার একমাত্র উপায় মুর্শিদে কামেলের পাক তাওয়াজ্জু। সেই জন্য আল্লাহ পাক এরশাদ করেনঃ
“ইয়া আয়য়ুহাল্লাজিনা আমানুত তাকুল্লাহা ওয়াবতাগু ইলাইহিল অছিলা”
অরথাতঃ হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও তাঁহাকে পাইবার জন্য অসিলা অন্মেষণ কর- তাহাতে সম্ভবতঃ তোমরা সফল হইতে পারিবে।(মায়েদাঃ৩৫)।
সেই অসিলাই জামানার কামেল ওলী সকল। জামানার মুজাদ্দেদ ও শ্রেষ্ট কামেলে মুকাম্মেল,আরিফে বিল্লাহ হযরত খাজাবাবা শাহ সুফী এনায়েতপুরী(কুঃছেঃআঃ) সাহেব,যিনির তাওয়াজ্জু-এ –এত্তেহাদির দ্বারা লক্ষ লক্ষ মুর্দা দেল জিন্দা হইয়া আল্লাহ ভুলা দেলে আলাহর জিকিরে পরিপূর্ণ হইতেছে। লতিফায়ে কালব জাত আহদিয়াতের নুরে পরিপূর্ণ হইতেছে,সে সত্য জিন্দা পীরের কদম মুবারক জড়াইয়া ধরিয়া,আদব,বুদ্ধি,মহব্বত, ও সাহসের সঙ্গে তদীয় পাক দেলে দেল মিশাও। তবেই তোমাদের মুর্দা দেল জিন্দা হইয়া তথায় আল্লাহ আল্লাহ জেকেরের পায়দা হইবে এবং আল্লাহতাআয়ার তাজাল্লী দ্বারা দেল রশন হইবে। যেমন ইলেকট্টিক কারেন্ট মূল স্রোতের সঙ্গে কানেশন লাগাইয়া যেখানে বাল্ব ফিট করনা কেন,সুইচ টিপ দিলেই বাল্ব জলিয়া উঠিবে। সেইরূপ পীরের পাক দেলের সহিত মুরিদের দেল মিশাইলে মুর্শিদে কামেলের পাক তাওয়াজ্জুহতে মুরিদের মাথার চান্দি হইতে পায়ের তলা পর্যন্ত কোটি কোটি লতিফা আল্লাহ্র জেকেরে পূর্ণ হইয়া মাতোয়ারা হইবে, দেল আল্লাহ্র দিকে ঘুরিয়া যাইবে,যাহাকে “সুলতানুল আজকার” বলা হয়। এই অপূর্ব নেয়ামত পীরে কামেলের পাক তাওয়াজ্জু ছাড়া সম্ভব নয়।
তাই হযরত শেখ সাদী(রঃ) বলেনঃ
“জাগ্রত পরান যার মরে না সে জন,
দৈহিক মরন তার নহেরে মরণ।
শত শত মুর্দা দেল মাটির উপরে,
তার চাইতে অধিক ভাল যদিও কবরে।
অর্থাৎ”তুমি একটি লতিফা জিন্দা করিয়া কবরে শুইয়া থাক,সমস্ত পৃথিবীর মুর্দা দেলওয়ালা লোকের চাইতে কবরেই তমার অধিক শান্তি হইবে।
তাই মহাকবি হাফেজ বলিয়াছেনঃ “ওগো দুনিয়ার মানুষ! তোমরা যদি আমার পীরকে বাধ্য করিয়া দিতে পার,তাহা হইলে আমি তোমাদেরকে সমরখন্দ বোখারার সিংহাসন বিলাইয়া দিব। তিনি আপন পিরকে এত ভালবাসিতেন যে,পৃথিবির সর্ব শ্রেষ্ঠ সিংহাসন সমরখন্দ বোখারার সিংহাসনও তাঁহার পীরের প্রতি ভালবাসার কাছে রুচ্ছ মনে হইয়াছে।
তাই আশেক সকল বলিয়াছেনঃ “অতি ভাগ্যের জোরে মুর্শিদের বোল”। কামেল পীরের সান্নিধ্য লাভ করা অতি ভাগ্যের জোরেই সম্ভব হয়।পীরে কামেলের তাওয়াজ্জু ছাড়া কেহই আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য অন্য কোন উপায়ে অর্জন করিতে পারেন নাই। তাই পারস্যের মহাকবি বলেনঃ “হাফেজ !তুমি যত বড়ই জ্ঞানী-গুনী,বুদ্ধিমান,সাইন্টিস্ট,বিজ্ঞানি হও না কেন, তমার পীরের কাছে তুমি কিছুই নও। যদি দুর্বিপাকের তুফান হইতে বাঁচিতে চাও, তবে পীরের সংগকে “নুহের তরী” মনে করিয়া শক্ত করিয়া ধর, নচেৎ এমনই দুর্বিপাকের তুফান আসিবে যাহা তমার সকল ভিত্তিকে ভাঙ্গিয়া মেসমার করিয়া ফেলিবে।তাই সমস্ত মুরিদগণকে জানানো জাইতেছে যে, যদি আখেরী জামানার বালা হইতে বাঁচিতে চাও, দুশমনের হাত হইতে যদি বাঁচিতে চাও,কঠিন ব্যাধি হইতে যদি বাঁচিতে চাও,আল্লাহতায়ালার গজব হইতে যদি বাঁচিতে চাও,তবে জামানার শ্রেষ্ঠ আরেফ খাজাবাবা হযরত এনায়েতপুরী(কুঃছেঃআঃ)সাহেবের পাক দেলের দিকে দেলকে মুতাওয়াজ্জুহ করিয়া সদা সর্বদা খেয়াল করিতে থাক, আনোয়ারে জেকেরে এলাহিয়ার ফয়েজ আল্লাহতায়ার কুওয়াত,লজ্জত,মহব্বতের সঙ্গে ভরিয়া,মুর্দা-দেল চির জিন্দা হইয়া,এসমে জাত আল্লাহ্-- আল্লাহ—আল্লাহ—জেকেরে লতিফায় কালবে জারি হতেছে।ইহাই বর্তমান জামানার গজব হইতে বাঁচার উত্তম উপায়। হর নিঃশ্বাসে খেয়াল কালবে ডুবাইয়া রাখ। দমে দমে আল্লাহকে স্মরণ কর।তবেই আল্লাহতায়ালার রহমত তোমাদের উপর বর্ষিবে। সকল বিপদ-আপদ,বালা-মুছিবত ও তকদীরের বুরা-ঈ হইতে বাঁচিতে পারিবে।
দশ লতিফার পরিচয়
(১) ক্বলবঃ স্থান-বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নীচে। ইহা তওবার মাকাম। হযরত সাইয়্যিদিনা আদম (আঃ)-এর ওসীলায় ফায়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে। ক্বলবের নূরের রং হলুদ।
(২) রূহঃ স্থান-ডান স্তনের দুই আঙ্গুল নীচে। ইহা ইনাবাতের মাকাম। হযরত সাইয়্যিদিনা নুহ্ (আঃ) ও হযরত সাইয়্যিদিনা ইব্রাহীম খলিলুল¬াহ্ (আঃ)-এর উসীলায় ফায়েযপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। রূহে নূরের রং লাল।
(৩) সিরঃ স্থান- বাম স্তনের দুই আঙ্গুল উপরে। ইহা যুহ্দের মাকাম। হযরত সাইয়্যিদিনা মুসা কালীমুল¬াহ্ (আঃ) এর উসীলায় ফায়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে। সিরের নূরের রং সাদা।
(৪) খফীঃ স্থান-ডান স্তনের দুই আঙ্গুল উপরে। ইহা ওয়ারার মাকাম। হযরত সাইয়্যিদিনা ঈসা র”হুল¬াহ্ (আঃ) -এর উসীলায় ফায়েযপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। খফীর নূরের রং কালো।
(৫) আখফাঃ স্থান-সীনার মধ্যস্থানে। ইহা শোকরের মাকাম। আখফা হযরত রাসূলুল¬াহ্ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম হতে ফায়েযপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। আখফার নূরের রং সবুজ।
(৬) নফসঃ স্থান-কপালের মধ্যস্থানে। ইহা তাওয়াক্কুলের মাকাম। নফ্সের নূর বিশুদ্ধ হওয়ার পর রংবিহীন তারার ন্যায় চমকদার উপলব্ধি হবে।
(৭) আবঃ স্থান-সম্পূর্ণ শরীরে। আব অর্থ পানি। ইহা কানাআতের মাকাম।
(৮) আতশঃ স্থান-সম্পূর্ণ শরীরে। আতশ অর্থ আগুন। ইহা তাসলীমের মাকাম।
(৯) খাকঃ স্থান-সম্পূর্ণ শরীরে। খাক অর্থ মাটি। ইহা রিযার মাকাম।
(১০) বাদঃ স্থান-সম্পূর্ণ শরীরে। বাদ অর্থ বাতাস। ইহা ছবরের মাকাম।
সুলতানুল আযকার ঃ
একসাথে দশ লতিফার যিকিরকে সুলতানুল আযকার বলা হয়। এই মাকামে শরীরের প্রত্যেকটি লোমকূপ হতে আল্লাহ-আল্লাহ যিকির জারি হয়। মস্তানে কাদরী শাহ্ মোহাম্মদ সুলতান মাাহমুদ আনছারী হুজুর বলেনÑ দশ লতিফার মাধ্যমে আমল করতে পারলে নূরের খেলা, তাজালির ফায়েয বুঝতে পারবে। দশ লতিফার প্রতিটি মাকামের রং দেখতে পাবে। মোয়াক্কেল ও যেরে কদম দেখতে ও বুঝতে পারবে। এতে বুঝা যাবে সুলতানুল আযকার হাসিল হয়েছে।
এরপর দায়েরা মাকামে যেতে হবে।
নক্শাবন্দিয়া-মুজাদ্দিয়া তরীকায় দায়েরার সংখ্যা- ৩০টি
কাদরিয়া তরীকায় দায়েরার সংখ্যা- ১৬টি
চিশতিয়া তরীকায় দায়েরার সংখ্যা- ১৪টি
লতিফা
মানব দেহের ভিতরে দশটি লতিফা বা মোকাম সে মোকাম চেনার উপায়
আলহাজ মাওলানা হযরত সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী
মানব দেহের ভিতরে দশটি লতিফা বা মোকাম আছে এ সমস্ত লতিফা বা মোকাম চেনার উপায়। ইমামে রাব্বানী কাইউমে জামানী গাউছে ছামদানী হযরত শায়েখ আহম্মদ শেরহিন্দী মোজাদ্দিদ আলফেসানি (রঃ) বলিয়াছেন যে, মানুষের দেহে দশটি লতিফা আছে কলব, রুহ, ছের, খফি, আখফা, নফছ, আব (পানি), আতশ (অগ্নি), খাক (মৃত্তিকা) ও বাদ (বাতাস)। প্রথম পাঁচটি আলমে আমরের (সূক্ষ্ম বা অদৃশ্য জগতের) লতিফা। শেষের পাঁচটি আলমে খালকের (স্থুল বা দৃশ্য জগতের) লতিফা। আলমে আমর, উক্ত জগতকে বলা হয় যাহা আল্লাহতায়ালার হুকুমমাত্রই সৃষ্টি হইয়াছিল। আলমে খালক উক্ত জগতকে বলা হয় যাহা আল্লাহতায়ালার হুকুমে ক্রমান্বয়ে বিকাশপ্রাপ্ত হইয়াছিল। আলমে-আমর আরশের উপরিস্থিত অদৃশ্য জগত, আলমে খালক আরশের নিম্নস্থিত দৃশ্য জগত।
১। কলব লতিফা- হযরত আদম (আঃ)-এর জেরে কদম। এই লতিফার রঙ জরদ বা সরিষা ফুলের ন্যায়।
২। রুহ লতিফা- হযরত নূহ (আঃ) ও হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর জেরে কদম , রঙ স্বর্ণ বা টর্চলাইটের আলোর ন্যায় দেখতে।
৩। ছের লতিফা- হযরত মূসা (আঃ)-এর জেরে কদম, রঙ সাদা বর্ণ।
৪। খফি লতিফা- হযরত ঈসা (আঃ)-এর জেরে কদম , রঙ কাল বর্ণ।
৫। আখ্ফা লতিফা- হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহি আলাইহিস সাল্লামের জেরে কদম, রঙ সবুজ বর্ণ অর্থ্যাৎ গাছের পাতার ন্যায় দেখা যায়।
৬। নফস লতিফা- কোন নবীর জেরে কদম নহে। এই নফস ‘খোদ খাহাম খোদী’ অর্থ্যাৎ কাহারো তাবে নয়, সে নিজেই নিজ। এই লতিফার রঙ মূলে সাদা কিন্তু দেখার বেলায় কেহ বেগুনী রঙ দেখে, কেহ সরিষা ফুলের ন্যায় দেখে আবার কেহ সাদা রঙ দেখে। লতিফা নফস পাক হইলে খারাপ বা কু-কাজে আর খাহেশ থাকে না বরং সর্বদা সৎ কাজের দিকে ধাবিত হয়।
উল্লেখিত ছয় লতিফা ব্যতীত আরও চারটি লতিফা আছে। ইহা মানব শরীরের মৌলিক উপাদান। এই চারটি উপাদানে মানব শরীর গঠিত। আরবীতে এই চারটি মৌলিক পদার্থকে ‘আরবা আনাছের’ বলে। ইহাদের নাম-
(ক) আব’ অর্থ পানি এই লতিফার রঙ নীল বর্ণের
(খ) আতশ’ অর্থ অগ্নি এই লতিফার রঙ কালো বর্ণের
(গ) খাক’ অর্থ মাটি এই লতিফার রঙ ধানী বর্ণের
(ঘ) বাদ’ অর্থ বায়ু এই লতিফার রঙ সাদা বর্ণের।
প্রকাশ থাকে যে, মোরাকাবাকারী যখন মোরাকাবা করিবে তখন খেয়াল করিবে ওই সকলের মধ্যে অর্থ্যাৎ আব, আতশ, খাক ইত্যাদির মধ্যে যত প্রকার দোষণীয় জিনিস রহিয়াছে, উহা সব দূর হইয়া যাবে।
১। কোররায়ে বাদের খাছিয়াত, কু-চরিত্র কু-খায়েশ ও কু-চিন্তা ইত্যাদি। মোরাকাবাকারী মোরাকাবা করার সময় খেয়াল করিবে, বাতাসের ভিতরে যত প্রকার দোষ আছে, তাহা সমস্তই দূর হইয়া যাবে।
২। কোররায়ে নারের খাছিয়াত,কিনা, হিংসা, বোকজ ও ক্রোধ ইত্যাদি। মোরাকাবাকারী মোরাকাবার সময় খেয়াল করিবে আমার অন্তরের ভিতর যত রকম দোষ আছে, তাহা সমস্তই ফয়েজের শক্তিতে দূর হইয়া যাইতেছে।
৩। আবের মোরাকাবার সময় খেয়াল করিবে, আমার কোররায়ে আবের ভিতরে যত প্রকার খারাপী আছে উহা সব দূর হইয়া যাইতেছে।
৪। মাটির মোরাকাবার সময় খেয়াল করিবে আমার কোররায়ে খাকের ভিতর যত প্রকার খারাপী আছে, উহা সব দূর হইয়া যাইতেছে
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭
মুসা আঃ এবং খিজির আঃ এর ঘটনা!
হযরত ইবনু আব্বাস (রা:) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত উবাই ইবনু কা‘ব (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) হ’তে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা (আঃ) একদা বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে দাঁড়ালে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, কোন ব্যক্তি সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী। জ্ঞানকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ না করার কারণে আল্লাহ্ তাকে তিরস্কার করে বললেন, বরং দু’সাগরের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে, যিনি তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী।
হযরত মূসা (আঃ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তার নিকট পৌছাতে কে আমাকে সাহায্য্ করবে? কখনো সুফইয়ান এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি কিভাবে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি? তখন বলা হ’ল, তুমি একটি থলিতে করে একটি মাছ নাও। যেখানে তুমি মাছটি হারাবে, সেখানেই আমার সে বান্দা আছে। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) একটি মাছ ধরলেন এবং থলিতে রাখলেন।অতঃপর মাছ নিয়ে তাঁর সঙ্গী ইউশা বিন নূনকে সাথে নিয়ে চললেন।শেষ পর্যন্ত তারা একটি পাথরের কাছে পৌছলেন এবং তার উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নিলেন।মূসা (আঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলি থেকে বের হয়ে লাফিয়ে সমুদ্রে চলে গেল।অতঃপর সে সমুদ্রে সুড়ঙ্গের মত পথ করে নিল।আর আল্লাহ্ মাছটির চলার পথে পানির প্রবাহ থামিয়ে দিলেন।ফলে তার গমনপথটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল।অতঃপর তারা উভয়ে অবশিষ্ট রাত এবং পুরো দিন পথ চললেন।
পরদিন সকালে হযরত মূসা (আঃ) তার সাথীকে বললেন, আমরা তো সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমাদের খাবার নিয়ে এস।হযরত মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ্ যে স্থানে যাবার কথা বলেছিলেন, সেই স্থান অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোনরূপ ক্লান্তিবোধ করেননি। সাথী ইউশা বিন নুন তখন বলল, আপনি কি ভেবে দেখেছেন, যে পাথরটির নিকট আমরা বিশ্রাম নিয়েছিলাম সেখানেই মাছটি অদ্ভুতভাবে সমুদ্রের মধ্যে চলে গেছে।কিন্তু আমি মাছটির কথা আপনাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। মূলত: শয়তানই আমাকে এ কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, পথটি মাছের জন্য ছিল একটি সুড়ঙ্গের মত আর তাঁদের জন্য ছিল আশ্চর্যজনক ব্যাপার।
হযরত মূসা (আঃ) বললেন, আমরা তো সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছি।অতঃপর তারা তাদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন এবং ঐ পাথরের নিকটে পৌঁছে দেখলেন, এক ব্যক্তি কাপড় মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। মূসা (আঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, এখানে সালাম কি করে এলো? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিযির জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বনী ইসরাঈল বংশীয় মূসা? মূসা (আঃ) বললেন, হ্যাঁ। আমি এসেছি এজন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হ’তে আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন। খিযির বললেন, হে মূসা! আমার আল্লাহ্ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আপনি জানেন না। আর আপনিও আল্লাহ্ প্রদত্ত এমন কিছু জ্ঞানের অধিকারী, যা আমি জানি না। মূসা (আঃ) বললেন, আমি কি আপনার সাথী হ’তে পারি? খিযির বললেন, ‘আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। যে বিষয় আপনার জ্ঞানের আওতাধীন নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করবেন কেমন করে?’ মূসা (আঃ) বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ্ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না’ (কাহফ ৬৭-৬৯) ।
অতঃপর তাঁরা দু’জনে সাগরের কিনারা ধরে হেঁটে চললেন। তখন একটি নৌকা তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা তাদেরকে নৌকায় তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। তারা খিযির-কে চিনতে পেরে বিনা ভাড়ায় তাঁদেরকে নৌকায় তুলে নিলো। যখন তাঁরা দু’জনে নৌকায় চড়লেন, তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির কিনারায় বসল এবং সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা বা দুই ফোঁটা পানি পান করল। খিযির বললেন, ‘হে মুসা! আমার ও আপনার জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহ্ জ্ঞান হ’তে ততটুকুও কমেনি যত টুকু এ পাখিটি তাঁর ঠোটের দ্বারা সাগরের পানি হ্রাস করেছে’।
তখন খিযির একটি কুড়াল নিয়ে নৌকাটির একটা তক্তা খুলে ফেললেন। মূসা (আঃ) অকস্মাৎ দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলেন যে, তিনি কুড়াল দিয়ে একটি তক্তা খুলে ফেলেছেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, আপনি একি করলেন? এ লোকেরা বিনা ভাড়ায় আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিলো, আর আপনি তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকা ছিদ্র করে দিলেন? আপনি তো একটি গুরুতর কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আঃ) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার এ ব্যবহারে আমার প্রতি কঠোর হবেন না।মূসা (আঃ)-এর পক্ষ থেকে প্রথম এ কথাটি ছিল ভুলক্রমে।
অতঃপর তাঁরা যখন উভয়ে সমুদ্র পার হলেন, তখন তারা একটি বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল।খিযির ছেলেটির মাথা দেহ হ’তে ছিন্ন করে ফেললেন। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আপনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? আপনি খুবই খারাপ একটা কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আঃ) বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করি, তাহ’লে আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না।অতঃপর উভয়ে চলতে লাগলেন। চলতে চলতে তাঁরা একটি জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট কিছু খাবার চাইলেন। কিন্তু জনপদ বাসী তাদের দু’জনের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।সেখানে তারা একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন, যা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।হযরত খিযির প্রাচীরটি মেরামত করে সুদৃঢ় করে দিলেন।হযরত মুসা (আঃ) বললেন, এই বসতির লোকদের নিকট এসে আমরা খাবার চাইলাম।তারা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।অথচ আপনি এদের দেয়াল সোজা করে দিলেন।আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।হযরত খিযির বললেন, এবার আমার এবং আপনার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল।এক্ষণে যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, আমি এর তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।
নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির।তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত।আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। কারণ, তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে ভাল নৌকা পেলেই জোরপূর্বক কেড়ে নিত। তারপর যখন এটাকে দখল করতে লোক আসল, তখন ছিদ্রযুক্ত দেখে ছেড়ে দিল। অতঃপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দ্বারা নৌকাটি মেরামত করে নিলো।আর বালকটি সূচনা লগ্নেই ছিল কাফের। আর সে ছিল তার ঈমানদার বাবা- মার বড়ই আদরের সন্তান । আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বড় হয়ে অবাধ্যতা ও কুফরি দ্বারা তাদেরকে কষ্ট দিবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে তার চেয়ে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুন।আর প্রাচীরের ব্যাপার এই যে, সেটি ছিল নগরের দু’জন ইয়াতীম বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন। তাদের পিতা ছিলেন সৎকর্ম পরায়ণ। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দয়াপরবেশ হয়ে ইচ্ছা পোষণ করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ করে নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ ইচ্ছায় এসব করিনি। আপনি যে বিষয়গুলোতে ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, এই হ’ল তার ব্যাখ্যা ।
(কাহফ ৭৯-৮২; ছহীহ বুখারী হা/৩৪০১ ‘নবীদের কাহিনী’অধ্যায়, ‘খিযিরের সাথে মূসা (আঃ)-এর কাহিনী’অনুচ্ছেদ, মুসলিম হা/২৩৮০, ‘ফাযায়েল’অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৬)।
শিক্ষা:
১. সকল জ্ঞানের আধার আল্লাহ্ রাববুল আলামীন। তিনি যাকে যতটকু ইচ্ছা প্রদান করেন।
২. জ্ঞান অর্জনের জন্য সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. শয়তান সর্বদা মানুষের পিছে পড়ে থাকে। সে তাকে প্রতিনিয়িত আল্লাহ্ বিমুখ করার চেষ্টা করে।
৪. জ্ঞান অর্জনের জন্য ধৈর্য অবলম্বন করা জরুরী।
৫. অহংকার করা বা নিজেকে সবচেয়ে জ্ঞানী ভাবা ঠিক নয়।