মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

কেল্লা শাহ্ বাবার ইতিহাস

কেল্লা শাহ্ বাংলার বিখ্যাত আওলিয়া ও ধর্ম প্রচারক হযরত শাহ্ জালাল ইয়ামেনি আউলিয়ার (র) অন্যতম মুরিদ ছিলেন।কেল্লা শাহ্র প্রকৃত নাম হল সৈয়দ আহমদ গেছুদারাজ।
কথিত আছে কেল্লা শাহ্ হযরত শাহ জালাল (র) এর সাথে ৩৬০ জন আউলিয়া সহিত বাংলায় ইসলাম প্রচার করতে আসেন।
তৎকালীন বাংলার রাজা ছিলো গৌর গোবিন্দ। তিনি ছিলেন তান্ত্রিক শক্তিতে বলিয়ান।রাজা গৌর গোবিন্দের "জীয়ন কূপ" নামে একটা আশ্চর্য জনক কূপ ছিল ।সেই কূপে মৃত লাশ ফেলে দিলে তা সাথে জীবিত হয়ে যেত।
শাহ্ জালাল ও ৩৬০ আওলিয়ার ইসলাম প্রচারের লক্ষে গৌর গোবিন্দের তুমল যুদ্ধ বাধে, এই যুদ্ধে গোবিন্দের যে সৈন্য মারা যেত তাকে রাজা জীয়ন কূপে ফেলে আবার জিবিত করে ফেলতেন।
এ ভাবে গৌড় গোবিন্দের সাথে হাজার চেষ্টা করেও যখন বাবা শাহ্ জালাল যুদ্ধে জয় লাভ করতে পারছিলেন না।তখন তিনি ধ্যানে জানতে পারলেন যে ঐ জিয়ন কূপের শক্তি না নষ্ট করা পর্যন্ত এই যুদ্ধে জয় লাভ সম্ভব না।তখন তিনি তার ৩৬০ আউলিয়াদের ডেকে জীয়ন কূপ নষ্ট করার জন্য বললে কেউ রাজি হয় নি।
কারন সেই কূপের পাহারায় থাকতো ৪০ জন উলঙ্গ নারী,ইসলামে অশ্লীলতার নিকট হওয়া হারাম।যখন শাহ্ জালাল খুব চিন্তায় মগ্ন ছিলেন,তখন শাহ্ জালাল বাবার অনুরাগি ভক্ত গেছুদারাজ বাবা শাহ্ জালালের চিন্তা মাখা মুখ সহ্য করতে না পেরে এই কঠোর কাজে রাজি হলেন।
এরপর যখন গেছুদারাজ সেই কূপের সামনে যান তখন ইসলামের মান অক্ষুন রাখতে নিজের ধারালো তরবারি দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে এক কোপে নিজের কল্লা কেটে তিতাস নদীতে ফেলে দেন। কল্লা ছাড়া বাবা গেছুদারাজ তরবারি হাতে যখনই জিয়ন কূপের সামনে গেলেন তখন বাবার এই ভয়াবহ রূপ দেখে ৪০ জন উলঙ্গ নারী দিক বিদিক হয়ে পালিয়ে যান।
গেছুদারাজ তখন এক টুকরা গরুর মাংস ঐ কূপে ফেলে দিলে সাথে সাথে ঐ কূপের সকল ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।এরপর কল্লা ছাড়া কেল্লার শাহ্র দেহ বাবা শাহ্ জালালের নিকট তার পায়ের সামনে গিয়ে প্রান ত্যাগ করেন।সেদিন শাহ্ জালাল বাবা বলেছিলেন "যদি কেউ আমার দরগাহ জিয়ারত করতে আসে,তাহলে সে যেন সবার আগে কল্লা শাহ্র মাজার জিয়ারত করে নেয়।না হলে তার জিয়ারতের অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।
" এরপর শাহ্ জালাল কল্লা শাহ্র পাক দেহ নিজ হাতে সিলেটে দাফন করেন।অপর দিকে বাবা কল্লা শাহ্ কাটা মাথা তিতাস নদীতে ভাসতে ভাসতে খড়মপুর নামক স্থানে আসলে তা খড়ম পুরের জেলেদের জালে আটকা পড়ে,যখনই হিন্দু জেলেরা নদী থেকে জাল টান দেন,তখনই নদীতে ভূমিকম্প শুরু হয়।ফলে গৌরাঙ্গ দাস নামক এক হিন্দু জেলে এই ঘটনার রহস্য বাহির করতে নদীতে ডুব দিয়ে দেখেন যে জালে মদ্ধে একটা কাটা মানুষের কল্লা আল্লাহ আল্লাহ জিকির করছে,এই কারামত দেখে সে অবাক হলে বাবা কল্লা শাহ তাকে নিজের মুরিদ করে নেন এবং খরমপুরে ইসলাম প্রচার করার নির্দেশ দেন।এরপর গৌরাঙ্গ দাস সেই জাল নদী থেকে তুললে বাবা কল্লা শাহ তাদের আড়ালে যেতে বলেন।
এরপর সবাই আড়ালে চলে গেলে তিতাস নদীর পাড়েই আল্লাহর কুদরতে আপনা আপনি গায়েবি কল্লার শাহ্র মাজার সৃষ্টি হয়।
শহীদ হয়েছেন আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে,তার পরও বাবা আজও খাটি ভক্ত পেলে নিজের মুরিদ করে নেন।
কল্লার রহস্য অগণিত,সেখানে না গেলে কেউ বুঝতে পারবেন না।আল্লাহর অলিরা যে মরে না,তার জন্য কল্লা বাবাই হল জলন্ত প্রমান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন