শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭

কামেল ওলীর সহোবত দলিল

এবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্নিত নবী (সঃ) বলেন যে ব্যক্তি যেমন লোককে ভালবাসে পরকালে সে তেমন লোকের সাথেই থাকবে (বুখারী ওয়া মুসলিম) । সে জন্য ইসলামি শরীয়াতে সর্বস্তরের মুসলমানদের জন্য নেককার কামিল ওলী আউলিয়া, পীর মাশায়েখদের সঙ্গতা লাভ করা ও তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করাকে ইসলামী শরীয়াত ফরজ করে দিয়েছে । (খোতবায়ে ছালেহিয়া, পৃঃ ২৩০)

নবী করীম (সঃ) বলেন – “নেককার লোকদের সাহচার্য লাভ ফাছেক ও বদকার লোকের সাহচার্যের দৃষ্টান্ত যথাক্রমে কস্তরী বিক্রেতা ও কামারের হাঁফর ফুঁকদানকারীর ন্যায় । কস্তরী বিক্রেতার কাছে তুমি সুঘ্রাণ পাবেই । পক্ষান্তরে কামারের হাঁফরের অগ্নির ফুল্কি তোমার জামা কাপড় জ্বালিয়ে দিবে । অথবা তার দুর্গন্ধ তো তুমি পাবেই । ঠিক তেমনি নেককার ও বদকার লোকের সোহবত সঙ্গতা লাভের অবস্থাও অনুরূপ । (বুখারী ও মুসলিম)

নেককারদের সঙ্গতা লাভ ও তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ সম্ভব । কারন মহানবী (সঃ) এর প্রিয়জন নেককার ওলি আউলিয়াগনই হলেন আল্লাহ পাক ও তার দ্বীনের পথের অভিসারীদের মধ্যে একমাত্র মাধ্যম ও যোগসূত্র । এই সম্পর্কে কোরানে উল্লেখ আছে-“হে ইমানদার তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তথা তার মুত্তাকী বান্দা হয়ে যাও এবং এ উদ্দেশ্য যথাযোগ্য মাধ্যম বা অসিলা (সঠিক পথ ও আল্লাহ প্রেমিক লোকদেরকে ওসিলা হিসাবে ) গ্রহণ কর । (সূরা মায়েদা ৩৫ আয়াত)

এই আয়াতের তাফসীর – তাফসীরে রুহুল বয়ানের ১ম খন্ড ৫৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে , অসিলা ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় না । আর এই অসিলা হল শরীয়াতের ওলামা হক্কানি এবং তরিকতের পীর মাশায়েখগন । শরীয়তে এই ওসিলা ধরার হুকুম হল ওয়াজিব । (ছালেহিয়া ২১৮)

অনুরূপ উল্লেখ আছে তাফসীরে আজিজি ১১৮ পৃষ্ঠা । “যাদের আদেশ পালন করা আল্লাহর হুকুম মতে ফরজ, তারা হলেন ছয় শ্রেণী তন্মধ্যে শরীয়তে মুজতাহিদ ইমামগন এবং তরিকতের শায়েখ বা মোর্শেদ ইমামগণ । তাদের যে কোন একজনের আদেশ পালন করা সাধারণ উম্মাতের প্রতি ওয়াজিব । (আনওয়ারে মুকাল্লেসীন ১৮ পৃঃ, তাফসীরে হুজুল মায়ানী ১ম খন্ড পৃঃ ৩৫৬)

অন্তরের কাঠিন্যই হচ্ছে সমস্ত গোনাহের ভিত্তি । নফসের গোলামী এবং অসৎ ধারনার উৎপত্তি এখান থেকেই হয় । যা হিংস্রতা ও পাশবিকতার দিকে নিয়ে যায় । তাই নবী করীম (সঃ) বলেন –“মানুষের শরীরে একপিণ্ড মাংস আছে তা যখন সুস্থ থাকে তখন সমস্ত দেহ সুস্থ থাকে, আর যখন তা অসুস্থ হয় তখন সমস্ত দেহই অসুস্থ হয়ে যায় । সেই মাংসপিণ্ডের নামই হল ক্কালব ।”

তাই ক্কাল্‌বের একাগ্রচিত্ততা না হওয়া পর্যন্ত পাপমুক্ত অন্যায়মুক্ত হওয়া অসম্ভব । নামাজের পবিত্রতাও হুজুরী ক্কাল্‌বের উপর নির্ভরশীল । আর তরিকার (ভণ্ড পীর মোর্শেদ নয়) খাঁটি   পীর মোর্শেদের মাধ্যমে আল্লাহর পথে অগ্রসর হবার সাধনায় লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত একাগ্রচিত্ত বা হুজুরী ক্কাল্‌ব হওয়া সম্ভব নয় । সে জন্য তোমরা কামিল মোর্শেদের তরীকাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো । তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন কর । ইহা ওয়াজিব (তাফসীরে মাযহারী ৩য় খন্ড পৃঃ ৬২) ঈমান ও সৎকর্ম যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্তর্ভুক্ত তেমনি পয়গাম্বর এবং নেককার কামিল বান্দাদের সংসর্গ ও মুহাব্বাত আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্তর্ভুক্ত । কারন পয়গাম্বর ও নেককার কামেল লোকদের সংসর্গ ও মুহাব্বাত আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের উপায়-মাধ্যম বা অসিলা । (মা’আরেফুল কুরআন)

সূরা তওবা ১১৯ আয়াতর তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন ৫৯৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে-

“যাদের ক্কাল্‌বে আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রভাবান্বিত নয় এবং হারাম মাকরুহ কাজ করে এমন নাফরমানদের সাহচার্য ত্যাগ কর, সাদেকীন অর্থাৎ হক্কানি ওলামা মাশায়েখ কামেল নেককার বান্দাগণের সাহচার্য অবলম্বন করা ওয়াজিব । এরা আলেমে জাহের ও বাতেন নিয়ত-ইচ্ছা, কথা ও আমলে–এলেমে এক সমান ।

সূরা নেসার ৫৯ আয়াতে ৫ পারায় আছে এরাই উলুল আমর, আলেম ফকীহ্‌ মাশায়েখে তরীকত নায়েবে নবী । তাদের হাতেই দীনি ব্যবস্থার দায়িত্ব অর্পিত । এজন্য তাদের হুকুম মান্য করা ওয়াজিব । (মা’আরেফুল কুরআন ২৬৯)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন